মাওলানা হাবীবুল্লাহ সাহেব, পিতার নাম মরহুম জহের আলী, জন্মগ্রহণ করেন ১৯৭৯ সালে টাংগাইল জেলার ভূঞাপুর থানার টেপিবাড়ী গ্রামের মুন্সিবাড়ী সম্ভ্রান্ত পরিবারে। তাঁর জন্মকাল থেকেই পরিবারে শিক্ষা ও ধর্মীয় চেতনার একটি উজ্জ্বল পরিবেশ বিরাজমান ছিল। ছোটবেলাতেই তিনি দাদা ও নানার তত্ত্বাবধানে কুরআন শিক্ষা গ্রহণ শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি স্থানীয় প্রাইমারী স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন, যেখানে পাঠ্যবিষয় শেখার পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষার প্রতি আগ্রহ জন্ম নেয়।
বিদ্যালয় জীবনে মাওলানা নুরুল ইসলাম সাহেবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং তাঁর তত্ত্বাবধানে চলাফেরার মাধ্যমে মাদ্রাসায় পড়াশোনার আগ্রহ বাড়তে থাকে। তাঁর শিক্ষা জীবনকে আরও সুদৃঢ় করতে খালু ক্বারি হাবীবুল্লাহ সাহেবের দিকনির্দেশনায় চার মাস তাবলীগের কাজ করেন, যা তাঁর আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই অভিজ্ঞতার পর তিনি মাদ্রাসা দারুল রাশাদ, মিরপুর, ঢাকা থেকে আনুষ্ঠানিক ধর্মীয় শিক্ষার যাত্রা শুরু করেন।
১৯৯৮ সালে তিনি তাঁর প্রিয় শায়েখ, মাওলানা শাহ আব্দুল মাতীন বিন হুসাইন (দামাত বারাকাতুহুম)-এর সঙ্গে বায়াতের সম্পর্ক স্থাপন করেন। এরপর থেকে তিনি শায়েখের সান্নিধ্য এবং তাঁর দীক্ষা অনুযায়ী নিজেকে ধারাবাহিকভাবে গড়ে তোলেন। মাদ্রাসার ছুটির সময় তিনি খানকায় অবস্থান করে শায়েখের সঙ্গে সময় কাটাতেন, হযরত মাসজিদে প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজে অংশগ্রহণ করতেন এবং শায়েখের বয়ান মনোযোগসহ শুনতেন। এই সময়কাল ছিল তার আত্মিক ও শিক্ষাগত জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০০৩ সালে তিনি দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করেন। পরবর্তীতে ২০০৪ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসায় উচ্চতর পড়াশোনার পাশাপাশি শায়েখের তিরমিজির শরীফ এবং হযতের খেদমতে নিবেদিতভাবে তিন বছরের মতো নিয়োজিত থাকেন। এই সময়ে তিনি শায়েখের শিক্ষাদান এবং তত্ত্বাবধানে ইসলামী শিক্ষা ও আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।
শিক্ষাগত যাত্রা:
মাওলানা হাবীবুল্লাহ সাহেবের শিক্ষাজীবন বিভিন্ন মাদ্রাসা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জুড়ে বিস্তৃত।
২০০৬ সালে ফজলুল উলূম মাদ্রাসা, জুরাইন, ঢাকা থেকে উচ্চতর ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ।
২০০৭ সালে ছাওতুল হেরা মাদ্রাসা, টাংগাইল থেকে শিক্ষার ধারাবাহিকতা।
২০০৮ সালে আল জামিআতুল ইসলামিয়া ফজলে খোদা, মেঘুলা, দোহার, ঢাকা থেকে আরও উন্নত আধ্যাত্মিক ও শিক্ষাগত জ্ঞান অর্জন।
২০১৮ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত জামেউল উলূম মাদ্রাসা, দক্ষিণ শিমুলিয়া, মেঘুলা, দোহার, ঢাকায় শিক্ষা ও দীক্ষাদান চালিয়ে আসছেন।
২০১৮ সালে হযরত খেলাফত দান করেন। মাওলানা হাবীবুল্লাহ সাহেব তাঁর জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে শায়েখের নিঃস্বার্থ এহসান স্মরণ করেন এবং নিজেকে শায়েখের তত্ত্বাবধানে গড়ে তোলেন। তাঁর পিতা-মাতা এবং সন্তানরা বায়াতের মাধ্যমে এই ধারার অংশীদার হয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ।
মাওলানা হাবীবুল্লাহ সাহেবের জীবন শিক্ষার প্রতি এক অনন্য ভক্তি, আধ্যাত্মিক সাধনা এবং ধর্মীয় সমাজসেবার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত। তাঁর জীবনযাত্রা প্রমাণ করে যে শিক্ষা ও আধ্যাত্মিক চেতনা মানব জীবনের প্রতিটি স্তরে কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।